| ১৬ জুন ২০২০
কোভিড’ ১৯ এর কারণে এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের দিকে সবার নজর। তাই স্বাস্থ্যখাতই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ২৯ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট বাজেটের ৭ দশমিক ২ শতাংশ। গত অর্থবছরে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তার চেয়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি।
অন্যদিকে বিশ্বমহামারীর সংকট মূহুর্তে করোণা প্রতিরোধে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। নিঃসন্দেহে করোণা মোকাবেলায় বরাদ্দ খুবই জরুরী। সারা বিশ্ব করোণা নিয়ে গবেষনা করছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও গবেষনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে সমন্বিত স্বাস্থ্যবিজ্ঞান গবেষনার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। করোণা মোকাবেলায় ফ্রন্টলাইনারস চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী তাদের জন্য ৮’শ ৫০ কোটি টাকা প্রস্তাব করেছে।
একটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে। আর একটি প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ণ ব্যাংক (এডিবি) দেয়া ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞদের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে না রেখে স্রেফ আমলাদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাত পরিচালিত হচ্ছে। ফলশ্র“তিতে দীর্ঘমেয়াদি কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং সংস্কার কাজে মনোযোগ রাখছেন না। কারণ ধরুন একজন কর্মকর্তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বদলী হয়ে আসলেন।
প্রথমতঃ বিষয়টি জানা দরকার তারপরতো বাস্তবায়ন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো তিনি জেনে উঠার আগেই বদলী হয়ে গেলেন। স্বাস্থ্যখাতের মূল সমস্যা হলো ব্যবস্থাপনা। ব্যবস্থাপনার সংকট মেটাতে না পারলে এতো এতো বরাদ্দ দিয়ে কোন লাভ নেই। প্রাইভেট হাসপাতালে কোভিড ১৯ সার্ভিস চার্জের অজুহাতে যে ভূতুরে বিল করা হচ্ছে সেটি দেখার দায়িত্ব কার? একজন মানুষ দুটো হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে তৃতীীয় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করছেন সে দায় কার? এন’৯৫ মাস্কের প্যাকেটে নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করা হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছুই জানা গেল না, তাহলে এ ব্যাপারে দায় কার? প্রশাসনের দায়িত্ববোধের অভাব নাকি নাগরিকের সাথে মধুর নিষ্ঠুরতা? তাহলে বরাদ্দ নিয়ে কথা বলে লাভ কি? নানা ধরনের অভিযোগ থাকলেও নাগরিক সুরক্ষায় সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর ধনী দেশগুলো করোনা মোকাবেলায় হিমসিম খাচ্ছে।
সা¤প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়সহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় সরকার ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আরও পরিবর্তন দরকার। সেবার ব্রত না থাকলে আমরা কখনও করোণা মোকাবেলায় সফল হতে পারবো না। করোণা সংক্রমণের বিস্তার রুখতে বাড়তি বিনিয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্যনীতির অভিমূখ নিযে আবারও চিন্তা করতে হবে। শুধুমাত্র বাড়তি অর্থ হলে হবে না। স্বাস্থনীতির দরকারী পরিবর্তনগুলো চোখে আঙ্গুল দিযে দেখিযে দিয়েছে কোভিড ১৯। যারা করোণা হতে দেশকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবেন, তুচ্ছতা, ক্ষুদ্রতা ভুলে পাশে দাঁড়াবেন, সহায়তা করবেন, প্রকৃতপক্ষে তারাই মাতৃভূমি বাংলাদেশের শুভার্থী। পৃথিবীর কয়েকটি দেশের সাথে সাথে বাংলাদেশে অনুমতিপ্রাপ্ত ৪ টি ফার্মসিউটিক্যালস কোম্পানি ভ্যাকসিন উৎপাদনের কার্যক্রম চালিযে যাচ্ছে। তাই এই ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে গবেষনার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির অনুরোধ করছি। সকল ধরনের পার্থক্য, বিভেদ, বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে করোণার এই দূর্যোগ মূহুর্তে প্রত্যেকের পাশে প্রত্যেকের দাঁড়াবার সময়।
আইসিইউ এবং ভেন্টিলেশনের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে এবং পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল নিযোগের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। হাসপাতালগুলোতে সেন্ট্রালি অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া প্রযোজন। করোণাকালে বিভিন্ন এলাকায় করোণা ডেডিকেটেড হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দেশে প্রায় ৫২ টি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এই কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। কোভিড ১৯ পরীক্ষার জন্য সরকার যথেষ্ট পরিমাণ কিটস্ সরবরাহ করেছেন। বর্তমান সরকারের আমলে ১০ বছরে হাসপাতালের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হযেছে।
দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন করে মোট ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ২৪ টি শয্যা স্থাপন করা হযেছে। সেক্ষেত্রে দেশে বর্তমান শয্যা ও রোগীর অনুপাত ১ঃ ১১৬৯ যা ২০০৬ সালে ছিল ১ঃ ২৬৬৫। কিন্তু করোণার দূর্যোগ মূহুর্তে রোগীর সংখ্যা ও রোগের ধরনের কারণে আলাদা করে করোণা ডেডিকেটেড হাসপাতাল তৈরি করতে হয়েছে। দেশে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামীণ জনগনকে স্বাস্থ্যসেবা ও ৪৫ প্রকার ঔষধ বিনামূল্যে দেয়া হয। যেহেতু বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতা রয়েছে সেহেতু বাজেট বাস্তবায়নে কোন সমস্যা হবে না। মানুষকে ভালবেসে ভয়কে জয় করে দেশের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছেন।
মোঃ সরওয়ার হক চৌধুরী
সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ||
৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ |
১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ |
২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ |
২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |