দি গাংচিল ডেস্ক | ২৩ আগস্ট ২০২০
দেশের প্রায় অর্ধেক জেলা অতিবৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় দীর্ঘদিন বন্যার পানিতে প্লাবিত ছিল। উপকূলীয় অঞ্চলে আগস্টের শুরু থেকে বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়। এখন এর ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের বিপদ বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলকে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু, অমাবস্যা এবং সাগরে লঘুচাপ- একই সময়ে তিন বিপদ ঝামেলায় ফেলেছে।
সম্প্রতির বৃষ্টিপাতের তথ্যগুলো বিশ্নেষণ করে দেখা গিয়েছে, জুলাই মাসে রংপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। মধ্যাঞ্চলকেও বন্যায় নাকাল হতে হয়েছে। আগস্ট মাসে এসব এলাকায় বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে উপকূলীয় জেলাগুলোতে বেড়েছে। ফলে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় জনপদে দেখা দিয়েছে নতুন দুর্ভোগ।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আরিফ হোসেন সমকালকে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আগস্টে এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাধারণত শুধু অতিবৃষ্টির কারণে এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় না। সব সময় কিংবা সব বছরে এমন অবস্থা দেখা যায় না। এবার পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে গেছে। ১৯ আগস্ট শুরু হয় অমাবস্যা। একই সময়ে সাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় ছিল এবং মধ্যপ্রদেশে সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাব যুক্ত হওয়ায় জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়। চলতি মাসজুড়ে উপকূলসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকায় ভারি বর্ষণের আভাস দিয়ে তিনি বলেন, সোম ও পরের দিন মঙ্গলবার বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কিছুটা কমে আসতে পারে। বাকি দিনগুলোতে অতিবৃষ্টির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, এ মাসের শেষদিকে ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে, তবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে না। কারণ, নদনদীগুলোতে এই সময়ে এসে পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর বর্তমানে বেশিরভাগ নদনদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি জানান, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলায় এখনও বন্যার পানি রয়েছে। আত্রাই, ধলেশ্বরী ও পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। তবে চলমান বর্ষণে তিনটি নদীর পানি বাড়ার আশঙ্কা নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, আজ রোববার ভারি বর্ষণ এবং সাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে কপবাজার, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, বরিশাল, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং তাদের অদূরবর্তী চর ও দ্বীপগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়েও ১ থেকে ২ ফুট অধিক উচ্চতায় বায়ুতাড়িত জোয়ারে প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। কপবাজার, চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে থাকা মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলা হয়েছে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে।
কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় শনিবারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারি বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। শনিবার সর্বোচ্চ ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় চট্টগ্রামে। এ ছাড়া সন্দ্বীপে ৮৬, কপবাজারে ৭৫, কুতুবদিয়ায় ৭৭, সীতাকুণ্ডে ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাত রেকর্ড রাজধানী ঢাকায় ৪৬ মিলিমিটার। তাছাড়াও উপকূলীয় জেলাগুলোতেও অনেকাংশই বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে ভারতের মধ্যপ্রদেশে অবস্থান করছে। সেখানে রয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। নতুন করে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ তৈরির আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। ফলে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে আগামী বুধবার পর্যন্ত। এদিকে, প্রতিকূল আবহাওয়ায় বিভিন্ন ফসলের আবাদ বিঘ্নিত হচ্ছে দেশজুড়ে। দীর্ঘকালীন বন্যার ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগই মিলছে না। বরং নতুন নতুন বিপদের মুখোমুখি কৃষকরা।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ||
৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ |
১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ |
২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ |
২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |