| ৩০ জুন ২০২০
এটাএকটা ভাবার মত বিষয় যে এত ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন পরিমণ্ডলে জন্ম নেয়া এই মানুষগুলোর কথা একই রকম কেন? তাদের মতেমানুষের মুক্তি মানে এই মায়া থেকে মুক্তি, সত্য অনুধাবন।
মায়া থেকে মুক্তিরপথ সম্পর্কে তাদের উপদেশগুলো প্রায় একইরকম – আত্ব অনুসন্ধান।পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে যা আমরা গ্রহন করি তা সচেতন ভাবে পর্যবেক্ষণ করা, ইন্দ্রিয়বশিভুত না হওয়া, মোহ থেকে মুক্তির সাধনা করা ইত্যাদি।
ভাববাদীরা বলেন যে ব্যক্তি মানসই মুখ্য। বাকি সব মায়া। এখন এটা গভীরভাবে পর্যালোচনা না করে এটাকে সহজ ভাবে বিশ্বাস করলে মনে হবে যে ব্যক্তি মানুষ নিজের মন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বা মোহ মুক্ত হতে পারলে সমাজ সুন্দর হবে।
কিন্তু একটি দুটি ব্যক্তির মন সুন্দর হওয়া বা জ্ঞানী হওয়াতে সমাজ সুন্দর হয় না। সমাজ একটা সিস্টেমে চলে, যার স্বীকার হয় সেই সমাজের সকল মানুষ।
তাই দু একজনের মোহ মুক্তি, বা সত্য লাভ বা জ্ঞান লাভ দিয়ে মানুষের কল্যাণ করা যায় না বৃহৎ অর্থে। মানুষ চিন্তাশীল জীব, অন্য প্রাণী থেকে তার এই পার্থক্য যে সে কেবল খেলে, ঘুমালেই তার মন পরিতৃপ্ত হয় না সব সময়।
তার পেটে ভাত থাক বা না থাক তার মনে তার চারপাশের জগত সম্পর্কে ভাবনা আসে, সে তার জীবনের অর্থ খুঁজে। এখন কেন মানুষের ভিতর এই প্রবনতা, কেন অন্য প্রাণীরা জীবনের অর্থ খুঁজে না, শুন্যতা বোধ দ্বারা তাড়িত হয় না কিন্তু মানুষ এক অদ্ভুদ শুন্যতা বোধ অনুভব করে বা জীবনের কি মানে, কেন বেঁচে থাকতে হবে এই জাতীয় দার্শনিক চিন্তা করে সেটা এখনও অনেক গবেষণার বিষয়। কিন্তু এটা মানুষের বৈশিষ্ট্য তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
একটা ছোট্ট শিশু বা কিশোর, কিশোরীও ভাবে সে কে, কেমন করে এই জগত হল, তার জীবনের মানে আছে কিনা ইত্যাদি। পরবর্তীতে বড়দের থেকে সে নানা উত্তর পেয়ে মন কে পরিতৃপ্ত করে বা মেনে নেয়। এসব ভাবনা থেকে যারা পীড়া অনুভব করেছেন তারা সংসার ছেড়ে সাধনার পথ বেছে নিয়েছেন এই সব বুঝার জন্য, যেমন – গৌতম বুদ্ধ বা বাউল ফকির, সাধকগণ ।
তারা অনুধাবন করেছেন যে সব কিছুর খেলা মেলা, ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হয় মানুষের মন জগতে। কষ্ট বা সুখ লাভ সবই হচ্ছে মনের অনুভুতি বা কোন কিছুর প্রতি তার প্রতিক্রিয়া।
তো এই মন যদি মোহ মুক্ত হয়ে জগতকে পর্যবেক্ষণ করে এবং নিজের ইন্দ্রিয় যা দ্বারা এই সব জগতের বিষয় তার মনে অনুপ্রবেশ করে তা সম্পর্কে যদি সজাগ হওয়া যায় তাহলে তা আর তাকে অস্থির বা ব্যতিব্যস্ত করবে না। নিজ মনে শান্তি বজায় রাখতে পারলে দুনিয়া শান্তি। তো এক হিসাবে সেটা ঠিক।
নিজ মনকে, স্বত্তাকে জানা, নিজ শরীর এর সাথে জগতের সম্পর্ক, ক্রিয়া প্রতিক্রয়া, আবেগ কি, কোন কোন কারনে কোন আবেগ এর উদয় হয় এগুলো জানা তো অবশ্যই দরকার মানুষের, যেহেতু সে চিন্তাশীল, আবেগপ্রবণ, ও জীবন , জগত সম্পর্কে কৌতূহলী। জীবনের মানে কি এই প্রশ্ন তার মনে আসে। তাই এই সাধনা অবশ্যই সে করবে।
এখানেই সে অন্য জীব থেকে ভিন্ন। এটাকে আমি আধ্যাত্বিকতা বলি। একজন বড় বিজ্ঞানীও যেমন আইনস্টাইন বা স্টিফেন্স হকিংস তারাও কি সৃষ্টি রহস্য নিয়ে ভাবেন নি, ইশ্বর আসলে কি বা তার অস্তিত্বের স্বরুপ নিয়ে ভাবেন নি? ভেবেছেন, তাদের মত করে তার উত্তর মিলিয়েছেন।
সকল মানুষই কম বেশী এসব দার্শনিক ভাবনা জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে ভাবে। এই প্রাকৃতিক জগতের নিয়মগুলো কেন একই রকম, কেন কিছু সুত্র দ্বারা তার ব্যাখ্যা করা যায় এবং
তা প্রয়োগ করলে তার যথারততা মেলে, কেন এই প্রাকৃতিক নিয়মগুলো এরকম সুত্রবদ্ধ, এলোমেলো নয়? ফিজিক্সের নতুন নতুন তত্বগুলো যেমন কনা তত্ব, তরংগ তত্ব, অনিশ্চয়তা তত্ব,শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল এক্সপেরিমেন্ট, বিগ ব্যাং, সকল কিছুই শক্তির রুপান্তর, বা শক্তির ক্ষয় নেই, সৃষ্টি নেই, সব বস্তুই শক্তির বিভিন্ন রুপের প্রকাশবা “পাশযুক্ত ভবেৎ জীব, পাশমুক্ত ভবেৎ শিব।
শক্তিরূপেণ সংস্থিতা। জগতের সর্বভূতে যিনি শক্তিরূপেস্থিত হইয়া আছে। দেহে খালি তার জাগরণ। কুণ্ডলীনি,” এগুলোর মধ্যে কোন অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আছে কিনা তা নিয়ে মানুষ গবেষণা করবে, ভাববে এটাই স্বাভাবিক।
ভাষা বিশ্লেষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই জ্ঞানের সাধনার পথে। জ্ঞান উন্মোচনের জন্য বা ইতিহাস এর পাঠ উদ্ধারের জন্য। ভাষা পূর্বপুরুষদের, অতীতের, ইতিহাসের সাক্ষ্য ও জ্ঞান বহন করে। আমাদের অঞ্চলের হাজারবছরের কৃষির অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান সাধনার ইতিহাস বা সমাজ পরিবরতনের, বিপ্লবেরবা সর্বোপরি সংস্কৃতির ইতিহাস যাই বলি না কেন তা আমাদের ভাষার মাধ্যমেসংরক্ষিত হয় ও আমাদের কাছে পৌঁছায়। যে জাতির ভাষা বিলুপ্ত প্রায় সে জাতিরঅস্তিত্ব টিকে না।
এসববিষয়ে চিন্তাউদ্রেক কারী অনেক লেখা আছে। যেমন রবি চক্রবর্তী ও কলিম খানেরক্রিয়া ভিত্তিকও বর্ণ ভিত্তিক শব্দার্থ বিধি ও তাদের গবেষণালব্ধ অনেকলেখা খুবই চমকপ্রদ।
এখন এগুলো করতে গেলেনিজেকে সময় দিতে হয়, বা এমন একটা সমাজ দরকার পড়ে যেখানে উন্নত মানসিকতারচর্চা করা বা জ্ঞানের চর্চা করার মত পরিবেশ আছে। এখন বিদ্যমান পুজিবাদীব্যবস্থা বলুন বা পূর্বের সামন্তবাদী, এই ধরনের সমাজ ব্যবস্থায় ব্যক্তি তার জীবন টিকিয়ে রাখার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হয়।
এই ধরনের অর্থনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থা মানুষের স্বাভাবিক জীবন কেই রুদ্ধকরে দেয়, তোসেখানে মোহ মুক্তির সাধনা, বা সত্য জানার সাধনা করার অবকাশ কই।
তাই মহা মনিষীরা বা ভাববাদীরা যে আত্মউপলব্ধির কথা বলেছেন সেটা হয়তো দু একজন এর পক্ষে সম্ভমবিদ্যমানসমাজ ব্যবস্থায়। আর কার্ল মার্ক্স এই জোর জুলুমের, বেশির ভাগ মানুষের মজুরী দাসহয়ে মানবেতর জীবন থেকে মুক্তির কথা বলেন। এই জগত অনিশ্চিত ও ক্ষনস্থায়ী, তাইমায়া। কিন্তু এই ক্ষনস্থায়ী অনিত্য সময়টুকুতে কিন্তু মানুষের বাস।
তাই যাকরার তা এই সময়েই করতে বলেন মহা মনিষীরা। যেমন লালন এর গানেও আমরা এইকথাগুলো পাই। এই সময়টুকু যেন মানুষ স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে জীবনটা উপভোগ (ভোগ নয়) করতে পারে বা সাধনা করার মত পরিবেশটা পায় সেটা কিন্তু প্রকারন্তরে যুগে যুগে বিপ্লবীরা করে।
কিভাবে;সাম্য ভিত্তিক বা নিপীড়নহীন সমাজ নির্মাণের প্রচেস্টার মধ্য দিয়ে।মার্ক্সএর দ্বান্দিক বস্তুবাদকে অনেক মার্ক্সবাদী (নিজেকে দাবি করেন)ভাল ভাবেবুঝে না বলেই এটাকে এমন ভাবে উপস্থাপন করে যাতে মনেহয় এটাও একটাধর্মীয় মৌলবাদের মত বিষয়ে পরিনত হয়েছে।
কিন্তু যেকোনো বিজ্ঞান ভিত্তিক দর্শনের মুল ভিত্তি বা দ্বান্দিক বস্তুবাদের মুল ভিত্তি হল পরিবেশ, পরিস্থিতি, বস্তু জগত নিয়ত পরিবরতনশিল এটা মেনে নেয়া, এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকা নয়।
দ্বন্দ, সংঘাত, অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান, ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহন, অবিরত জ্ঞান চর্চা ও সামনে এগিয়ে যাওয়া একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে, তা হল — সকল মানুষের সম্মান, অধিকার রক্ষা করবে এমন একটি সাম্যবাদী সমাজ নির্মাণ; পরস্পরের সাথে, প্রকৃতির সাথে ভারসাম্য পূর্ণ সহাবস্থান মুলক একটি সমাজ। তাই কি
মনস্বিতা বুলবুলি
ভাববাদী কি দ্বান্দিক বস্তুবাদী বা মানব কল্যাণকামী সকলেরই মেলবন্ধন এমন একটা সমাজে হতে পারে। এমন একটা সমাজ নির্মাণে তাই তাদের সকলেরই এগিয়ে আসা উচিৎ।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |