দি গাংচিল আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ১২ আগস্ট ২০২০
দক্ষিণ ভারতের ব্যাঙ্গালোর শহরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা এক পোস্টকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাত থেকে ব্যাপক সহিংসতায় অন্তত তিন জনের মৃত্যু হয়েছে এবং শতাধিক আহত হয়েছে।
স্থানীয় একজন রাজনীতিবিদের আত্মীয় ফেসবুকে ইসলামের নবী মোহাম্মদকে নিয়ে ঐ পোস্ট দিয়েছিলেন।এতে বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে অভিযোগ করে রাজনীতিবিদের বাড়িতে হামলা চালায় এবং থানার সামনে বিক্ষোভ করতে থাকে।
বেঙ্গালুরু পুলিশ বুধবার ইসলাম ও তার বিশ্বাসকে আঘাত করে পোস্ট দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত পি নবীনকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযুক্ত পি নবীন পুলকেশী নগর বিধায়ক আখন্দা শ্রীনীবাস মুর্তির ভাগ্নে বলে জানা গেছে।
ফেসবুকে পোষ্টটি করার পর থেকে উত্তেজিত জনতা আখন্দা শ্রীনীবাস মুর্তির বাসভবন এবং পরে ডিজে হলি ও কেজি হলি থানার চত্বরে এবং এর আশপাশে সহিংস বিক্ষোভ শুরু করে। তারা থানা লক্ষ করে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে এবং শ্রীনীবাস মুর্তির বাসভবন এবং যানবাহন জ্বালিয়ে দেয়। এতে কমপক্ষে তিন জন সাধারণ নাগরিক এবং ৫০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
ডিজে হলির ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত নবীনকে অবমাননাকর পোস্ট করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া অগ্নিসংযোগ, পাথর ছোঁড়া ও পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে মোট ১১০ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শান্তির বিষয়টি ধরে রাখতে পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য সকলকে আবেদন জানিয়ে বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশ কমিশনার কমল পান্ত টুইট করেছেন।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে পান্ত বলেন, “আমরা জেনেছি যে ঘটনার সময় তিনজন মারা গিয়েছে। তবে এই মৃত্যুর পেছনের সঠিক কারণ আমরা এখনও বের করতে পারি নি। ”
পান্ত বলেন, ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ (ডিসিপি) এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ৫০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। “পুলিশ জিপ, বাস, এবং এই এলাকায় পার্ক করা অন্যান্য যানবাহন জনতা আগুন ধরিয়ে দেয়। ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ এবং অন্যান্যরা যে দু’টি গাড়িতে ঘটনাস্থলে এসেছিল তাতে আগুন দেয়া হয় বলে পান্ত জানিয়েছেন।
রাজ্য সরকারও সহিংস সংঘর্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদিউরাপ্পা এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
ইয়েদিউরাপ্পা বলেছিলেন, “বিধায়ক আখন্দ শ্রীনিবাস মুর্তির বাসভবনে এবং পরে ডিজে হলি স্টেশন সীমান্তে পুলিশের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্ররোচিতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সরকার দোষীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা নেবে”। “সরকার এ জাতীয় উস্কানি ও গুজব সহ্য করবে না। আমি জনগণের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করছি। ”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাসভরাজ বোমাই বলেছেন “পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমরা বিষয়টি পুরোপুরি তদন্ত করব। তবে, ভাঙচুর করাতে সমস্যা সমাধানের উপায় নয়। অতিরিক্ত সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং পুলিশদের পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে বলা হয়েছে”
ঘটনার কয়েক ঘন্টা পরে বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশ এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা লাঠিপেটা, টিয়ার গ্যাস এবং গুলি চালানো শুরু করেছিল।
এদিকে, একজন প্রবীণ পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, “অভিযুক্ত জানিয়েছেন যে তার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল এবং অবমাননাকর পোস্ট আপলোড করতে তিনি অসচেতন ছিলেন। আমরা মুছে ফেলা পোস্টটি পুনরুদ্ধার করেছি এবং বিস্তারিত তদন্ত চলছে। এই মুহূর্তে ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা অস্বীকার করা যাবে না। ”
সহিংস বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ডি কে শিবকুমার বুধবার নগর থেকে দলীয় নেতাদের ডেকে একটি জরুরি সভা করেছেন। কংগ্রেসের সমস্ত বিধায়ক, এমএলসি, প্রাক্তন বেঙ্গালুরু মেয়র এবং অন্যান্য নেতারা কুইনস রোডের পার্টির সদর দফতরে একত্রিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে মানুষের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন।
ইতোমধ্যে পুলিশ ডিজে হলি ও কেজি হলি থানা সীমানায় কঠোর কারফিউ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল 6 টা পর্যন্ত শহরে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা অনুযায়ী বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) বুধবার দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করে এই ঘটনাকে একটি “পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র” বলে অভিযোগ করেছে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং জেডি (এস) সুপ্রিমো এইচ ডি দেভ গৌড় রাজ্য সরকারকে জড়িতদের বিরুদ্ধে “নির্দয়” পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রাক্তন সিএম এইচ ডি কুমারস্বামী বলেছিলেন যে এই ধরণের ঘটনা পুনরায় না ঘটবে তা নিশ্চিত করা সরকারের উচিত। তিনি বলেন “কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায় আইনের উর্ধ্বে নয় এবং যে দেশের আইনকে সম্মান করে না, তাকে শাস্তি দেওয়া উচিত। সরকারের এই বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত যে এই জাতীয় ঘটনাগুলির যেন পুনরাবৃত্তি না হয়”।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |