| ১০ জুলাই ২০২০
বিদায়ের গানগুলো
————
একেবারে নির্জন দীর্ঘদিন, অলস দুপুর, সন্ধ্যা ও রাত,
চারদিক খা খা করা মৃত্যুর সংবাদ,
মন খারাপ করা দিন ঢলে যায় নিজের নিয়মে।
একেকটি দিনের সামনে দাঁড়াতে
কী যে বিষণ্ণতা আসে!
কী যে এক অনিশ্চয়তার মাঝে
রাঙা অরুণ ক্রমেই বিবর্ণ হতে থাকে।
তিনটি ফোন কলে দুইদিনে তিনটি মৃত্যু সংবাদ।
অমিতর ছোটবেলার বন্ধু,
তার টাইফয়েড ধরা পড়েছে।
আরেক বন্ধু চলে গেছে দু’দিন আগে
পৃথিবীর রাজপাট চুকিয়ে।
কিভাবে চলে গেলো, কখন চলে গেল, কে হলো তার শেষ বন্ধু!
না, আজকাল করোনাকাল; এখন
মৃত্যুতে শেষ বন্ধুর অপেক্ষার প্রয়োজন
গেছে ফুরিয়ে।
মৃত্যুরও যে এমন অসুখ হবে
ভাবতেই নির্জন দিনগুলো আরও নীরব হতে থাকে।
মাঝে মাঝে অনুষ্কা শংকরের
রাগের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার চেষ্টা করি;
কিন্তু মৃত্যুর এই ডামাডোল এতই উচ্চতায় যে __
একে এড়ানোর সব চেষ্টাই ব্যর্থ।
হায় গো দীর্ঘদিন!
হায় সকাল, হায় দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যার রাগ!
গ্রন্থপাঠ ও তার ভাবনা
———————————-
অদ্য রাত্রিতে যে বইটির পাঠ সমাপ্ত হলো,
তা এমন বিষণ্ণতা দেবে ভাবিনি।
লাগাতার ধরাতলে সমাহিত যাত্রীদের ভিড় লেগেছে
সেই যে কোভিড -১৯ এর উপদ্রবে __
তার নিত্য সংবাদ,
পরিসংখ্যান ব্যথিত করে চলেছে
ভাগ্যবলে বেঁচে থাকা মানুষদের; আমিও তাদের একজন।
এই ব্যথাকে এড়াতে সঙ্গীতের কাছে যাই।
ডুবে যাই সুরের ঝঙ্কারে,
মিশে যাই বাণীর গভীরে;
পারিনা কিছুতে মৃত্যুরে এড়াতে।
সেই চলমান মিছিলের শ্লোগান এড়াতে বইয়ের কাছে যাই,
ডুবে যাই বর্ণ বিন্যাসে;
মিশে যাই অতীত ইতিহাসের সাথে।
কবিতা-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-দর্শন-নাটক, প্রহসন,
বিচরণ সবখানেই।
অদ্য রাত্রিতে সদ্য পাঠ সমাপ্ত বইটি যে এত বিষণ্ণতা দেবে!….
পাতার পর পাতা জুড়ে কেবল
লাশ আর লাশ,
সেসব লাশের দুর্গতিও কম নয়!
গুলির পর গুলি, হত্যার পর হত্যা
নীরবে গুম, নীরবে ধরাতলে ঘুম।
লাশের অগুনন নামে লেখা
কালো অক্ষরে বইটির পাতা কেবল ভারী -ই হয়েছে,
মনকে সান্ত্বনা দিতে বলেছি __
এই বুঝি মৃত্যুর কথা শেষ হবে, আরেকটু পড়ি;
এই ভেবে পড়তে পড়তে শুধু পড়েছি __
মৃত্যুর দিন, লাশের নাম, রক্তাক্ত দিনের কথা।
সবশেষে মনে হলো
এরা কি এমন মৃত্যুকে ডেকে আনবে বলেই
একদিন একই জাহাজের যাত্রী হয়ে,
তারপরে বিভক্ত হলো ভাগে ভাগে?
পাঠ সমাপ্তি দিলো কিছু বিষণ্ণতা,
দিলো কিছু অভিজ্ঞতা,
দিলো কিছু ইতিহাসের বার্তা।
সেইসব দিনরাত্রি সেইসব মানুষ
আর আজকের মৃত্যুমুখ খুব স্তব্ধ রাত্রি এক।
আগমনী কালের অপেক্ষা
—————-
ভোরের হাওয়ায় ভেসে আসা খুব করে দূরের হাওয়া,
সে হাওয়ায় যদি ভেসে আসা হতো
খুব করে শান্ত ধরা!
তবে আজকের এই প্রভাতে
শোনা যেত এই, যে
আজ এ ধরার মুক্ত হলো; কিন্তু না,
না আজ পুনরায় এই সবুজ চিত্র অসুস্থ হলো।
শান্ত সকাল, পাখির গান, চুপচাপ মানুষ,
ওপার থেকে শুকনো পাতার
পোড়া গন্ধ ভারী করছে
শান্ত সকালের স্নিগ্ধতা।
আর কিছু না হোক
শান্ত সকালের স্নিগ্ধতা তো মেখে নেয়া যায়!
সকাল,দুপুর,বিকেল,সন্ধ্যা, আর অপেক্ষা
একটি উন্মুক্ত সকাল।
সেই মতে আজ
পুরাতনী সকাল, সেই দু’ চার ছয় হিসাব
এবং কথামৃত ও বাণী চিরন্তনীর কাছে
আত্ম সমর্পণ ও একটি দিন।
ফিরে আসা মানে নতুন জীবন
——————–
পরিচিত এক দিদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে
হাসপাতালে ছিলেন,
সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন __
এইভাবে ফিরে আসা জীবনযুদ্ধে জয়ী
মানুষগুলোর জন্য অনেক ভালোবাসা।
নীরবে চলে যাওয়া মানুষগুলোর জন্য
অনেক প্রার্থনা।
ক্রান্তিলগ্নে অসহায় মানুষের পাশে
দাঁড়ানো মানুষগুলোর জন্য
অনেক ভালোবাসা।
নিবেদিত প্রাণ ডাক্তার, নার্স, আইন- শৃংখলা বাহিনির
জন্য অনেক ভালোবাসা।
পরিচ্ছন্ন কর্মীর জন্য অনেক ভালোবাসা।
আপন ভাগের অন্ন বিতরণকারীর জন্য
অনেক ভালোবাসা।
মৃত্যুকে সাথে নিয়ে অর্থনীতির চাকা
চলমান রাখা
চা-শ্রমিকের জন্য অনেক ভালোবাসা।
ঔষধ বিক্রেতাদের জন্য অনেক ভালোবাসা।
মোদিদোকানি, সব্জি ভ্যানওয়ালা, রিক্সাচালক
তোমাদের জন্য অনেক ভালোবাসা।
সৃষ্টিশীল মানুষ লেখক,কবি, শিল্পী, সাংবাদিক,
এবং অন্যান্য কর্ম চঞ্চল মানুষের জন্য
অনেক ভালোবাসা।
নিজের সময় ব্যয় করে আমার সাধারণ
লেখাগুলো পড়ার
সুপ্রিয় পাঠকদের জন্য অনেক ভালোবাসা।
গবেষণাগারে নিয়োজিত গবেষকদের জন্য
অনেক অনেক ভালোবাসা,
অপেক্ষা শুধু সফল হবার আশায়।
ক্রান্তিকাল, মহামারী করোনা, উদ্বিগ্ন সময়,
মৃত্যু মিছিল, ঘুমিয়ে থাকা পৃথিবী,
কি বলি তোমাদের ?
পৃথিবী! তুমি জেগে ওঠো, তুমি জেগে ওঠো,
তোমাকে জেগে উঠতেই হবে।
***********************************
-লাবণ্য কান্তা
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |