| ২৬ জুন ২০২০
সময় খুব অদ্ভুত একটি ব্যপার, ভাবে মিনু। তার কাছে সময় যেন খুব ভারি একটি বোঝার মত, যা তার শরীর ও মনের উপর চেপে বসে থাকে। নাকি এটা তার মনের বা মস্তিস্কের সমস্যা। বেশ কয়মাস হল মিনু অসুস্থ, তাই চাকুরিবাকুরি বাদ দিয়ে ঘরেই কাটছে তার দিন। বেশ বেলা করে বিছানা ছাড়ে তারা। তারা বলতে তার ছয় বছর বয়সী মেয়ে, তার স্বামী আর সে নিজে। বৃদ্ধ বাবা, মা আছেন। তবে তারা সকালেই উঠে পরেন। সকালটা খুব মিস করে মিনু।
সকালের সোনালি রোদ, ঠাণ্ডা আমেজ আর গাছ-গাছালি। কিন্তু পারে না সে, রাত দুটোয় শুয়ে এত সকালে উঠতে। যখন সে ওঠে ততক্ষণে বাসায় কাজের লোকেরা আসতে শুরু করে, আসতে থাকে ফেরিওয়ালারা, আরও নানান লোক। ঘরের পাশে রাস্তা, লোকজনের হাঁকডাক। কি কর্কশ লাগে মিনুর এই বিচ্ছিরি ঘুম ভাঙ্গার সময়টা। এরপর ঘণ্টা খানেক দ্রুতই কেটে যায়। মেয়েকে স্কুলের জন্য তৈরি করা, নাস্তা করা, ঘর গুছানো, কি রান্না হবে তা বলে দেয়া, আরও কিছু টুকিটাকি কাজ। তারপর বেশ কিছুটা সময় মেয়ে স্কুলে, স্বামী বাইরে।-অবসর। ডেস্কটপে বসে পড়ে মিনু। ফেসবুকে ঢুকে দেখে ভাল কোন লেখা আছে কিনা অথবা কোন খবর।
যেদিন পড়ার মত অনেক কিছু থাকে সেদিন মনটা বেশ ভালই লাগে। ইউ টিউবে গান শুনতে ভাল লাগত, আজকাল আর তাও ভাল লাগছে না। সব গানই যেন এই কমাসে শোনা হয়ে গেছে। কেমন একঘেয়ে লাগে ইদানিং-টিভি, নেট, বই পড়া সবই। তাছারা আগ্রহুদ্দিপক কোন বইও হাতের কাছে নেই। তাই ঘুরে ফিরে নেটের দ্বারস্থ হওয়া। এভাবে গড়িয়ে যায় সময়। দুপুর থেকে বিকাল বা সন্ধ্যা কেটে যায় মেয়ে, স্বামীর সাথে। বিকেলে মেয়ের বাবা চলে যান কাজে। একটি ছোট্ট রেস্তোরা, চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। সন্ধ্যায় যে পাঁচ দিন মেয়েকে পড়াতে আসেন তার শিক্ষিকা সে কদিন তার সাথে টুকটাক গল্প চলে। সে চলে যায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ।
এরপর মেয়ে বসে ইউটিউব-এ। কার্টুন, আরও কত কি সে দেখে এক মনে। মিনু ঘড়ি দেখে। মাত্র আটটা। আবার, মাত্র নয়টা। ১২ টা বাজতে কত্ত দেরি। মাথাটা ভারি হয়ে আসে। ক্লান্ত লাগে তার। বই পড়তে শুরু করে সে। দু’ তিনটে বই কিছুদুর পড়ে আর এগুতে পারছে না। দুটি বই ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা। অনুবাদের ভাষা উপভোগ্য নয়। তাই ভাল লাগছে না। আরেকটি রাজনিতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্র বিশয়ক। হয়ত অসুস্থতার জন্য জটিল বিশয় পড়তে ভাল লাগছে না। কিন্তু কিছুদিন আগেও তো মিনু একটা গবেষণার কাজে অনেক পড়াশোনা করল। তখনও তো সে অসুস্থই ছিল। ভাবনার পর ভাবনার ঢেউ আছড়ে পড়ে মিনুর মনে।
বই ফেলে উঠে পড়ে সে। মায়ের ঘরে উঁকি দেয়। মা বিছানায় বসে কলকাতার সিরিয়াল দেখছেন। কি করবেন, তারও সময় কাটে না। মিনু ঢুকে পড়ে মায়ের ঘরে, বসে পড়ে সোফায়। টিভির দিকে তাকিয়ে থাকে। সব নাটকের একই কাহিনী, এমন্টাই মনে হয় তার। মায়ের সাথে গল্প করার চেষ্টা করে। দু’ তিনটে কথা এগুতেই মা মিনুর জীবনে করা ভুলগুলোর প্রসঙ্গ আনতে থাকেন। ছটফট করতে থাকে মিনু। এখনি মা তার সকল দোষ ও বোকামিগুলো বলতে শুরু করবেন। মায়ের সাথে গল্প করতে যাওয়ার এই হল বিপদ।মাঝে মাঝে ভীষণ রাগ হয় তার। সব কথা ফেলে কেবল কষ্টের কথাগুলোই শুনতে হয় তাকে। তাই সে উঠে চলে আসে।
আবার তাকায় ঘড়ির দিকে, মাত্র দশটা। সবই কেমন ফাকা ফাকা লাগে। এই অপেক্ষা অর্থহীন মনে হয়।কিসের জন্য মিনু অপেক্ষা করে। সে ভাবে তার স্বামির জন্য। কিন্তু সেতো আসবে রাত ১২টায়। এসেতো সেই ঘুমের প্রস্তুতি। তবে? হয়ত কোন কিছুর অপেক্ষায় মন অর্থ খুজে পায় সেই অর্থহীন সময়গুলোর। হয়ত, অপেক্ষা সেই আশা যা মানুষকে বাচিয়ে রাখে।
মনস্বিতা বুলবুলি
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |